ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় মাটি কেটে পাহাড় সাবাড়!

পেকুয়া অফিস ::   কক্সবাজারের পেকুয়ায় শিলখালীর জারুলবুনিয়ার উত্তরজুম সাপেরগারা নামক স্থানে চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড় খেকো স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে ওই স্থানে পাহাড়ে মাটি কেটে সাবাড় করার মহোৎসব চলছে। চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের বারবাকিয়া বনবিটের আওতাধীন রিজার্ভ সম্পত্তি জবর দখলের কু-মানসে উত্তর জুম সাপেরগারায় পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। সাপেরগারা মনিরুজ্জামান চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অল্প উত্তরে মাটি কেটে পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, শিলখালীর ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন উত্তরজুম সাপেরগারায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারী সম্পত্তি বেহাত করে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য পাহাড়ের সর্বোচ্চ চওড়া সমতলে পরিনত করতে এ মাটি কাটার কাজ অব্যাহত রাখে। ওই এলাকার মৃত নমি উদ্দিনের ছেলে নুর আলম নামক ব্যক্তি রিজার্ভ জায়গায় বসতি স্থাপনের জন্য পাহাড় কাটছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, শিলখালীর জারুলবুনিয়ার উত্তরজুম সাপেরগারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অল্প উত্তর দিকে নুর আলম ব্যক্তি পাহাড় সাবাড় করার কাজ করছেন। সাপেরগারা স্কুলের নিকট চড়াপারাপারে একটি সেতু নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। ওই সেতু পার হয়ে উত্তর দিকে রাজাখোলা ও জারুলবুনিয়া সড়কের নিকট নুরুল আলমের বাড়ি। সাপেরগারা পাহাড়ী চড়ার পর ফসলী জমি। বিলের পর উত্তরদিকে পাহাড়ের অবস্থান। পাহাড়টির উত্তরের শেষ সীমানায় রাজাখোলা পাহাড়ী চড়া রয়েছে। পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে ওই চড়াটির উৎপত্তি। রাজাখোলা ও সাপেরগারা গ্রামীণ সড়কে ওই ছড়ায় আরেকটি ব্রীজ রয়েছে। দ্বিতীয় ব্রীজের একটু পূর্বদিকে নুরুল আলমের বাড়ি। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগে নুরুল আলম রিজার্ভ জায়গায় অবৈধ বসতি স্থাপন করে। পাহাড়ে তার বসতির আয়তন বাড়াতে বাড়ির পূর্বপার্শ্বে মাটি কাটা কাজ বাস্তবায়ন করছে। সাবাড় করা পাহাড়ের ওই চওড়াটি জারুলবুনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। মানুষের বসবাস উপযোগী করতে ভূমিদস্যু চক্র নুরুল আলমের কু-দৃষ্টি পড়ে পাহাড়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানায়, নুরুল আলম সরকারী জায়গা নিয়ন্ত্রন করতে প্রচেষ্টা চালায়। প্রায় ৪ একরেরও অধিক বনভূমি তার কব্জায় এনেছে। পাহাড়ের চওড়া বিলীন করে সমতল ভূমি তৈরীর কাজ ওই ব্যক্তি করছেন। ১০/১২ জন শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটছে নুরুল আলম। মাটি কাটায় নিয়োজিত কয়েক জন শ্রমিক জানায়, পাহাড় কাটা মারাত্মক অন্যায় কাজ। এরপরও পেটের দায়ে জেনে শুনে অন্যায় করছেন তারা। দেখা গেছে, নুরুল আলমের বাড়ির উত্তর সীমানায় পাহাড়ী ছড়ার অবস্থান। ছড়াটি তার বাড়ির লাগোয়া। উপরে মাটি কাটছে। নিচের দিকে খননকৃত মাটিগুলি ফেলছে। নি:সরিত ওই মাটি গড়িয়ে পড়ছে ছড়ায়। এতে করে ছড়াটির গতিপথ হ্রাস পেয়েছে। পানি চলাচল থেমে গেছে ওই মাটির নি:সরিত পলির কারনে। দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি মাস দু’য়েক যাবৎ পাহাড় কাটছে। পাহাড়ে চওড়া সমতল করেছে। প্রায় ফুটবল খেলার মাঠ সমান অংশ পাহাড়ের চওড়ায় মাটি কেটে সমতল করে। নুরুল আলমের ভিটার লাগোয়া ওই চড়াটি প্রবাহমান। মাটি নি:সরন হওয়ায় চড়াটি ভরাট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। চড়াটির প্রশস্ত ওই স্থানে ক্ষীণ হচ্ছে। এ দিকে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও নেই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা। স্থানীয় লোকজন এ পাহাড় কাটার জন্য বনবিভাগকে দায়ী করছেন। তারা দেখলেও না দেখার ভান করে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাহাড় কাটায় নিয়োজিত নুর আলম জানায়, আমি বাড়ি করার জন্য মাটি কাটছি। এ জায়গায় আমরা বসবাস করছি। বনবিভাগ এসেছিল। তাদের সাথে আমার বুঝাপড়া হয়েছে। টাকা না দিলে কাজ করছি কিভাবে। বাড়ি করতে বাধা দিলে আমাদেরকে এখান থেকে বিতাড়িত করতে বলুন। বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল গফুর মোল্লা জানায়, কোন স্থানে পাহাড় কাটছে সেটি চিহ্নিত করব। অবশ্যই আইনের আওতায় এনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাহাড় কাটতে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবেনা। চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) কাইয়ুম মাসুদ প্রথমে তার পরিচয় ও নাম জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে অনেকটা বিব্রতবোধ করেছেন। তিনি জানান, নাম কেন জানবেন আপনারা। নিউজও করার দরকার কি। আমরা সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেব।

পাঠকের মতামত: